আজকাল বাংলাদেশের অনেক বাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, কলকারখানা ইত্যাদিতে নর্মাল পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পাশাপাশি স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাই যেমন জেনারেটর, আইপিএস, ইউপিএস, সোলার সেল ইত্যাদির ব্যবহার দেখা যায়। শহর, বন্দর, গ্রাম এমনকি দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় সোলার প্যানেলসহ অন্যান্য স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাইয়ের ব্যবহার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারে প্রত্যাশা পূরণ করছে। পাওয়ার সাপ্লাই লাইনের বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলেও স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাই থাকলে এখন আর হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করতে হয়না, আলোর অভাবে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া বাঁধাগ্রস্থ হয়না অথবা ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক থেমে থাকে না। স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সিস্টেম এর সাহায্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও মানুষ সময়মত তার কাজগুলো করতে পারে। এই অধ্যায়ে আইপিএস, ইউপিএস, জেনারেটর, চেন ওঠার সুইচ প্রভৃতি স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সাপ্লাইয়ের পরিচিতি, কার্যপ্রণালি, স্থাপন পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আইপিএস (IPS) এর পূর্ণ রূপ হলো 'Instant Power Supply'. কোন কারণে মূল বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে আইপিএস এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায়। এতে স্বয়ংক্রিয় সুইচ থাকে, যার কন্টাক্ট-এর পরিবর্তনে লোড বিদ্যুৎ সাপ্লাই পায় ।
IPS এর প্রধান দুইটি অংশ সঞ্চয়ী ব্যাটারি ও ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট। ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিটটি ইনভার্টার ও কনভাটার উত্তর কাজই করে এবং একই ইউনিটের মধ্যে থাকে। এসি সাপ্লাইকে ভিসিতে রূপান্তর এবং ব্যাটারি চার্জ করে বিদ্যুৎ সঞ্চিত রাখে। গ্রীড এর বিদ্যুৎ বন্ধ হলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত ডিসি বিদ্যুৎকে এসিতে রূপান্তর করে স্বয়ংক্রিয় সুইচ এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে লোডে সরবরাহ করে।
গ্রীডে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় আইপিএস হয়ে সরাসরি লোডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে এবং আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ হয়। আইপিএস এর ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে থাকে ইহার রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ- তে লেখা হয় । বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা নির্ভর করে, ব্যাটারির চার্জ ধারণ ক্ষমতার উপর। আইপিএস এর জন্য বিশেষভাবে তৈরি, সাধারনত ১২ ভোট, ২৪ ভোট, ৪৮ ভোল্ট এর লিড এসিড ব্যাটারি বা জেল/ড্রাই পিড এসিড ব্যাটারির সিস্টেম থাকে। বর্তমানে আইপিএস ব্যাপকভাবে বাসাবাড়ি, অফিস, ব্যবসা, প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক লোডে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। আইপিএল মেইন সরবরাহ থেকে ব্যাটারি বা ব্যাটারি থেকে মেইন সরবরাহে যেতে সুইচিং টাইম প্রায় ৫০০ মিলি সেঃ। বর্তমানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জ করে পরিচালনা করা যায়। যাকে সোলার আইপিএস বলে। এই ধরনের আইপিএস তিন প্রকার:১) অফ-গ্রীড সোলার আইপিএস 2 ) অ-ব্রীড সোলার আইপিএস ৩) অন-অফ গ্রীড আইপিএস বা হাইব্রিড আইপিএস।
আইপিএস এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এর আউটপুট। বাজারে দুই ধরনের আটপুট প্রদানকারী আইপিএস পাওয়া যায়:- মডিফাই সাইন ওয়েভ এবং পিউর সাইন ওয়েভ। মডিফাই সাইন ওয়েভ ইন্ডাকটিভ লোডের জন্য ক্ষতিকর।
আইপিএস এ ব্যবহৃত বিভিন্ন অংশসমূহ নিম্নরূপ- ১। রেকটিফায়ার (কনভার্টার) ২। ব্যাটারি ৩। ইনভার্টার ৪। বিশেষ সুইচ ও ৫। বৈদ্যুতিক লোড এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে দেয়া হলো:
১। রেকটিফায়ার: আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা মূলত এসি। বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন সকল ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কিছু ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইস ইত্যাদি পরিচালনার জন্য এবং আইপিএস, ইউপিএস এর সঞ্চয়ী সেলে বিদ্যুৎ শক্তিকে রাসায়নিক শক্তি রূপে জমা রাখতে ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। যেহেতু আমাদের দেশে ডিসি সরবরাহ নাই (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতিত) সেহেতু এসি সরবরাহ থেকে ডিসি তে রূপান্তর করা প্রয়োজন, এ কাজ করতে যে ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তা হলো রেকটিফায়ার। অর্থাৎ যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস অল্টারনেটিং কারেন্টকে ডাইরেক্ট কারেন্টে রূপান্তরিত করে তাকে রেকটিফায়ার বলা হয়। সাধারণত রেকটিফায়ার তৈরিতে সেমিকন্ডাক্টর ডায়োড ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার দুই প্রকার। যথা- হাফ ওয়েভ ও ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার। ফুল ওয়েভ রেকটিফায়ার দুই প্রকার (১) সেন্টার টেপ রেকটিফায়ার (২) ব্রিজ রেকটিফায়ার। (চিত্র ১.৩ এ ব্রিজ রেকটিফায়ার দেখানো হয়েছে) আইপিএস ও ইউপিএস এ বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখতে রেকটিফায়ার ব্যবহার করা হয়। রেকটিফায়ার এর আউট পুট থেকে যে ডিসি পাওয়া যায় তা বিশুদ্ধ ডিসি নয়। একে পালসেটিং ডিসি বলা হয়। এ পালসেটিং ডিসিকে ফিল্টারের সাহায্যে পিউর ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।
ফিল্টার (Filter) রেকটিফায়ারের আউটপুটে যে ডিসি পাওয়া যায় তা এসি মিশ্রিত ভেজাল যুক্ত। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে খাঁটি ডিসি সরবরাহের প্রয়োজন হয়। ফিল্টার সার্কিটের সাহায্যে অপ্রয়োজনীয় সিগনালকে বাদ দেয়া হয়। এই অপ্রয়োজনীয় বা ভেজাল অংশ বাদ দেয়াকে ফিল্টারিং বলে। ফিল্টার সার্কিট পাঁচ প্রকার। যথা- (১) প্যারালাল বা শান্ট ক্যাপাসিটর ফিল্টার (২) সিরিজ ইন্ডাক্টর ফিল্টার(৩) এলসি ফিল্টার(৪) আরসি ফিল্টার ও (৫) পাই ফিল্টার।
স্ট্যান্ডবাই পাওয়ার সিস্টেম (আইপিএস ও ইউপিএস) বিদ্যুৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিরূপে ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাখে। নর্মাল বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হলে জরুরি প্রয়োজনের সময় ব্যাটারিতে সঞ্চিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। এ কাজে সচরাচর লিড এসিড ব্যাটারি ব্যবহৃত হয়। স্বাভাবিক মোডে যখন লাইন ভোল্টেজ উপস্থিত থাকে, ব্যাটারিগুলো তখন চার্জ হতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে সামান্য ডিসচার্জ হয়। ব্যাটারি অবিরতভাবে সামান্য পরিমাণ কারেন্ট গ্রহণ করে, ফলে ব্যাটারি পূর্ণ চার্জিত অবস্থানে থাকে। পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ হলে ব্যাটারি হতে পাওয়ার ইনভার্টারের মাধ্যমে ডিসি থেকে এসি তে রূপান্তরিত হয়ে লোডে সরবরাহ হয়। ব্যাটারিতে কতকগুলো ইলেকট্রোকেমিক্যাল সেল বা কোষ থাকে যার একটির সাথে অন্যটি সিরিজে বা প্যারালালে সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারির সেল হল ব্যাটারির মূল উপাদান এবং এই সেল রাসয়নিক শক্তিকে বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ব্যাটারি ব্যাংক হলো অনেকগুলো ব্যাটারির সমষ্টি। এই ব্যাটারিগুলো সিরিজ বা প্যারালালে সংযোগ করা যায়। ভোল্টেজ বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে সিরিজে সংযোগ দিতে হয় এবং কারেন্ট বাড়াতে চাইলে ব্যাটারিগুলোকে প্যারালালে সংযোগ দিতে হয়। চিত্র ১.৫ এ ব্যাটারি ব্যাংক দেখানো হলো ।
৩। ইনভার্টার: ইনভার্টার ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত করতে ব্যবহার করা হয়। ইনভার্টারের আউটপুটে খুব অল্প পরিমাণ হারমোনিক ডিসটরশন থাকে। আধুনিক ইউপিএস/আইপিএস এ সচরাচর PWM (Pulse Width Modulated) ইনভার্টার ব্যবহার করা হয়। এ ইনভার্টার সিঙ্গেল ফেজ বা থ্রি-ফেজ হতে পারে। ইউপিএস ও আইপিএস ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। আমরা বাসাবাড়িতে সাধারণত এসি লোড ব্যবহার করি ফলে ব্যাটারিতে সঞ্চিত এই ডিসি কারেন্টকে এসিতে কনভার্ট করতে হয়। ইনভার্টারের সাহায্যে এই ডিসি কারেন্টকে এসি কারেন্টে রূপান্তরিত (Convert) করা হয়।
৪। স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ
এই ধরনের সুইচ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোডকে ইউপিএস এর সাথে যুক্ত বা বিচ্ছিন্ন করে। সাধারণ মোডে লাইন থেকে লোডে পাওয়ার সরবরাহ দেয়। যখন পাওয়ার বন্ধ হয় তখন স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ লোডকে ইউপিএস এ ট্রান্সফার করে। এ ব্যবস্থাপনাকে Standby Power Supply বলে।
৫। লোড (Load)
ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেকট্রনিক কোনো ডিভাইসকে ব্যাটারির বা পাওয়ার সাপ্লাইযের সাথে যুক্ত করলে যন্ত্রটির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। এগুলোকে লোড বলে। অর্থাৎ যা ব্যাটারি থেকে বিদ্যুৎশক্তি কনজিউম করে তাকে লোডবলে। লোড সাধারণত দুইধরণের: এসি লোড ও ডিসি লোড। আবার লোডের ধরনের উপর ভিত্তি করে বৈদ্যুতিক লোডকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা-
১। রেজিস্টিভ লোড (Resistive Load)
বাতির ফিলামেন্ট, স্থির রেজিস্ট্যান্স, পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স, সোল্ডারিং আয়রন, থার্মাল ওভার লোড রিলে ইত্যাদি ।
২। ইন্ডাকটিভ লোড (Inductive Load )
চোক কয়েল, ফ্যান, মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি।
৩। ক্যাপাসিটিভ লোড (Capacity Load )
ক্যাপাসিটর বা কনডেন্সার, ক্যাপাসিটর ব্যাংক, সিনক্রোনাস মোটর ও ফেজ অ্যাডভানসার ইত্যাদি।
কোন সিস্টেমে আইপিএস সংযোগ থাকা অবস্থায় মূল বিদ্যুৎ সাপ্লাই সরাসরি লোডে কাজ করে এবং একই সাথে আইপিএস এর ব্যাটারি চার্জও হয়। এর ক্ষমতা মূলত ব্যাটারির ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এর রেটিং ওয়াট, কিলোওয়াট বা কেভিএ তে লেখা হয়।
আইপিএস এর ইউনিটের মধ্যে ইলেকট্রনিক কন্ট্রোলার সার্কিট, ইনভার্টার ও কনভার্টার থাকে। এটি এসি কে পূর্ণ ডিসিতে রূপান্তরিত করে ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ জমা রাখে এবং বিদ্যুৎ উৎস বন্ধ হলে স্বয়ংক্রিয় সুইচের পরিবর্তনে ব্যাটারিতে জমাকৃত বা সঞ্চিত বিদ্যুৎ পুনরায় এসিতে রূপান্তর করে লোডে সাপ্লাই দেয় ।
আজকাল ব্যাপকভাবে আইপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। বাসা বাড়িতে ফ্যান, লাইট, টিভি ইত্যাদি চালাতে এবং অফিস কার্যক্রমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের জন্য আইপিএস ব্যবহার হয়। আইপিএস এর সুইচিং টাইম ১ সেকেন্ড ফলে ব্যবহারকারীর কম্পিউটার বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস রিসেট বা পুনরায় আরম্ভ হয়। আইপিএস কে হোম ইউপিএস বা ইপিএসও বলা হয়।
ইউপিএস (UPS) পূর্ণ নাম হলো Uninterruptable Power Supply বা Uninterruptable Power Source. ইউপিএস এমন একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ব্যবস্থা যা বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় করে রাখে এবং পাওয়ার সরবরাহ কোন কারণে বন্ধ হলে ইউপিএস নিরবচ্ছিন্নভাবে কম্পিউটার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিতে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ করতে পারে। ইউপিএস সাধারণত সহায়ক ( Auxiliary) বা ইমার্জেন্সি পাওয়ার সিস্টেম (Emergency Power System) অথবা স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর (Standby Generator) হতে ভিন্নতর। কেননা এটি তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এর সুইচিং টাইম খুব কম। ইউপিএল ০.১ সেঃ এর মধ্যে ব্যাক-আপ পাওয়ার দিতে পারে। ফলে কম্পিউটার রিসেট করতে হয় না। ইহা অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখতে পারে এবং যে কোন মূহুর্তে কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সরবরাহ করতে পারে।
ইউপিএস (UPS) সাধারণত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১। অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS ) |
২। লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস (Line-interactive UPS) ।
৩। অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস (Offline / Standby UPS )
১। অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) এ ডাবল কনভার্সন (Double Conversion) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি প্রথমে এসি ভোল্টেজ (AC Voltage) কে ডিসি ভোল্টেজ (DC Voltage)-এ রূপান্তর করে। তারপর, ইনভার্টিং (Inverting) করে আবার ডিসি ভোল্টেজ (DC Voltage)-কে এসি ভোল্টেজে (AC Voltage) রূপান্তর করে। সাধারণত অনলাইন ইউপিএস (On-line UPS) ৫ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে।
২। লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস (Line-interactive UPS)
লাইন ইন্টারএ্যাকটিভ ইউপিএস ( Line-interactive UPS) লাইনের ইনভার্টার (Inverter) কে মেইনটেইন (Maintanin) বা রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং নরমাল চার্জিং মোড (Normal Charging Mode) থেকে কারেন্ট পাথ (Current Path) রিডিরেক্ট (Redirect) করে।
৩। অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস (Offline / Standby UPS) অফলাইন বা স্ট্যান্ডবাই ইউপিএস ( Offline / Standby UPS) পদ্ধতিতে মূল সিস্টেম (Main system) লোড (Load)সরাসরি ইনপুট পাওয়ার (Input Power) এর সাথে সংযুক্ত থাকে। যখন মেইন পাওয়ার সাপ্লাই (Main Power Supply) সংযোগ দিতে ব্যর্থ হয়, তখন এটি পাওয়ার ব্যাকআপ (Power Back up) দেয়।
১। রেকটিফায়ার
২। ব্যাটারি
৩। ইনভার্টার
৪। স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ
৫। লোড
নোটঃ রেকটিফায়ার, ব্যাটারি, ইনভার্টার, স্টেটিক ট্রান্সফার সুইচ এবং লোড ইউপিএস, আইপিএস উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আইপিএস অংশে উপরোক্ত অংশগুলো বর্ণনা করা হয়েছে।
ইউপিএস বা Uninterruptable Power Supply এমন একটি ডিভাইস, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ চলাকালীন সময়ে নিজে ব্যাটারি চার্জ করে এবং এসি লাইন হতে লোড চলতে দেয়। আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সঞ্চিত বিদ্যুৎ থেকে লোডকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে থাকে।
কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসে নিরবচ্ছিন্ন পাওয়ার সরবরাহের জন্য এবং ভোল্টেজ রেগুলেশন, ওভার ভোল্টেজ, আন্ডার ডোস্টেজ থেকে যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করার জন্য ইউপিএস ব্যবহৃত হয়।
চেঞ্জ ওয়ার সুইচ যার মাধ্যমে দুই উৎস (জেনারেটর ও পিডিবি) থেকে আগত বিদ্যুৎ থেকে কোন একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকলে অন্যটি চালনা করার জন্য যে একটি মাত্র সুইচিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাকে চেঞ্জ ওভার সুইচ বলে।
এটি মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে-
১. ম্যানুয়ালি চেঞ্জ ওভার সুইচ
২. অটোমেটিক চেঞ্জ ওভার সুইচ
১। ম্যানুয়ালি চেঞ্জ ওভার সুইচ
এ ধরনের সুচিং ব্যবস্থার মেইন কারেন্ট চলে গেলে তখন জেনারেটরের লাইন চালনা করে, ব্যক্তি বিশেষকে চেক প্রতার সুইচের অপারেশন চেঞ্জ করতে হয়। এটা বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যবস্থা। এটার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন একটি লাইন চলে গেলে অন্য লাইনের মাধ্যমে লোডের সরবরাহ চালনা করা যায় ।
২। অটোমেটিক চেঞ্জ ওভার সুইচ
এই সুইচিং ব্যবস্থায় মেইন কারেন্ট চলে গেলে তখন জেনারেটরের লাইন চালু হয়ে স্বয়ংক্রিয় ভাবে রিলে ও টাইমার চে ওভার সুইচের অপারেশন চেঞ্জ করে। বর্তমানে এটা বহুল ব্যবহৃত একটি ব্যবস্থা। এটার মাধ্যমে খুব সহজেই যে কোন একটি লাইন চলে গেলে অন্য লাইনের মাধ্যমে লোডের সরবরাহ চালনা করা যায়।
চেঞ্জ ওভার সুইচ যার মাধ্যমে দুই উৎস, জেনারেটর, পিডিবি/আরইবি থেকে আগত বিদ্যুৎ থেকে, কোন একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা না থাকলে অন্যটি চালনা করে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ লোডে সরবরাহ দেওয়া হয়। এজন্য চেঞ্জ ওভার সুইচ এর গুরত্ব অপরিসীম ।
যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রুপান্তরিত করা হয় তাকে জেনেরেটর বলে। এ যান্ত্রিক শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন একটি চুম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) ও আর্মেচার। আর্মেচারের উপরিভাগে ল্যামিনেটেড সিলিকন স্টিলের প্লটে সুপার এনামেল কপার তারের কুণ্ডলি থাকে। আর্মেচারকে চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে ঘুরানো হয়। ফলে ফ্যারাডের সূত্র অনুযায়ী আর্মেচার পরিবাহিতে পরিবর্তি (এসি) ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force) তৈরি হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে আর্মেচারকে ঘুরানো হয় তাকে প্রাইম মুভার বলে। জেনারেটরের কিছু কৌশলগত পরিবর্তনের মাধ্যমে অর্থাৎ জেনারেটরের শ্যাটে কমুটেটর বসিয়ে এসিকে ডিসিতে রূপান্তরিত করা হয়।
জেনারেটর সাধারনত দুই প্রকার
১। এসি জেনারেটর
২। ডিসি জেনারেটর এসি জেনারেটর দুই প্রকার। সিঙ্গেল ফেজ ও থ্রি ফেজ জেনারেটর। ডিসি জেনারেটর বৈশিষ্ট্য দিক বিবেচনা করে দুই প্রকার। যথা-
১) সেলফ এক্সাইটেড জেনারেটর
২) সেপারেটলি এক্সাইটেড জেনারেটর ।
১. সেলক এক্সাইটেড (Self exclted) :
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড কয়েল জেনারেটরে উৎপাদিত কারেন্ট দ্বারা এনারজাইজড হয়। ফিল্ড করেল সংযোগের উপর ভিত্তি করে এই জেনারেটর তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
যথা-
১) সিরিজ জেনারেটর
২) শান্ট জেনারেটর
৩) কম্পাউন্ড জেনারেটর।
কম্পাউন্ড জেনারেটর আবার সংযোগের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১) সং শান্ট জেনারেটর
২) শর্ট শান্ট জেনারেটর
২. সেপারেটলি এক্সাইটেড (Separately excited)
এই ধরনের জেনারেটর এ ফিল্ড করেল বাহিরের কোন ডিসি সোর্স থেকে এনারজাইজড হয়।
সিরিয়া জেনারেটরঃ যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে সিরিজ জেনারেটর বলে।
নান্ট জেনারেটর: যে জেনারেটরের ফিল্ড করেন আর্মেচারের সাথে প্যারালালে সংযোগ থাকে, তাকে শান্ট জেনারেটর বলে।
কম্পাটিক জেনারেটরঃ যে জেনারেটরে দুইটি ফিল্ড কয়েল থাকে, একটি আর্মেচারের সাথে প্যারালালে এবং অন্যটি সিরিজে সংযোগ থাকে, তাকে কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
শর্ট শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের প্যারালালে শান্ট-ফিল্ড এবং সিরিজ কিন্তু করেল সংযোগ করা হয়, তাকে শর্ট-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
লং শাষ্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর : যে জেনারেটরের আর্মেচারের সাথে কিন্তু কয়েন সিরিজে এবং শাষ্ট ফিল্ড কয়েল প্যারালালে সংযোগ করা হয়, তাকে লং-শার্ট কম্পাউন্ড জেনারেটর বলে।
১. ইয়োক মেশিনের বাইরের আবরণীকে ইরোক বলা হয়। এটি কাষ্ট আয়রন বা স্টিল দারা তৈরি করা হয়। সম্পূর্ন এসেম্বলিকে ধরে রাখে এটি।
২. পোল: লেমিনেটেড সিলিকন ষ্টিলের শিট দ্বারা পোল তৈরি করা হয়। পোল গুলো ইরোকের সাথে বোল্ট দ্বারা যুক্ত করা হয়। পোল এর সাথে ফিল্ড থাকে।
৩. ফিল্ড ওন্যাডিং: ফিল্ড ওয়্যান্ডিং সুপার এনামেল কপার তার যারা তৈরি করা হয়। এগুলো প্রত্যেক পোল এর সাথে পেঁচানো অবস্থায় সিরিজে যুক্ত থাকে।
৪. আর্মেচার কোর: এটি হচ্ছে ডিসি মেশিনের রোটর। এটি দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির, অনেকগুলো প্লট দ্বারা তৈরি যা আর্মেচার গুয়ান্ডিংস বহন করে। আর্মেচার পাতলা লেমিনেটেড গোলাকার স্টিলের শিট দিয়ে তৈরি যেন এডি কারেন্ট লস বেশি না হয়।
৫. আর্মেচার অ্যান্ডিং: এটা হচ্ছে পেঁচানো কপার তারের কয়েন যা আর্মেচার প্লটের মধ্যে থাকে। আর্মেচার কন্ডাক্টরগুলো একটা থেকে অন্যটা এবং আর্মেচার কোর থেকে ইন্সুলেটেড থাকে।
৬. কমুটেটর। এটি দেখতে গোলাকৃতি। এর কাজ হলো জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং কারেন্ট (এসি) থেকে ডাইরেক্টর কারেন্ট (ডিসি) কনভার্ট করে। ৭. ব্রাশ ব্রাশ কার্বনের তৈরি। এটি মূলত কন্ট্যাক্ট যা লোডে (বহি সার্কিটে) পাওয়ার সাপ্লাই দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।
অবস্থান A. লুপ (কয়েল) যখন A তে অবস্থান করে তখন কোন ইএমএফ তৈরি হয় না অর্থাৎ ইএমএফ = ০ এর কারণ A অবস্থানে লুপ কোন ফ্লাক্স কর্তন করে না। লুপের দুপ্রান্ত ফ্লাক্সের সাথে সমান্তরাল থাকে।
অবস্থান B লুপ (কয়েল) যখন B তে আবস্থান করে তখন লুপের দুপ্রাপ্ত ৯০০ ডিগ্রী ঘুরে। যখন উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু বরাবর আসে কখন সর্বোচ্চ ফ্লাক্স কর্তন করে থাকে এবং জোনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে। অবস্থান C এই অবস্থানে লুপের দুপ্রাপ্ত ফ্লাক্সের অর্ধেক থেকে বিপরীতে আরো ৯০ ডিগ্রী অর্থাৎ ১৮০° সামনের দিকে অগ্রসর হয় এবং ইএমএফ আবার শূন্য (০) হয়।
অবস্থান D এই অবস্থানে লুপের দুপ্রান্ত বিপরীত মেরুর দিকে অর্থাৎ যে প্রাপ্ত আগে S পোল ছিলো সেটি এখন N পোলের দিকে এবং যে প্রাপ্ত N পোল ছিলো সেটি এখন S পোলের দিতে থাকবে। ফলে নেগেটিভ দিকে জেনারেটরে সর্বোচ্চ ই.এম.এফ উৎপন্ন করে ।
অবস্থান A. লুপ (করেল) অবস্থানে আবার সেই প্রথম অবস্থায় ফিরে আসবে। এভাবে জেনারেটর এসি বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
জেনারেটরের উৎপন্ন ভোল্টেজের দিক নির্ণয় করার জন্য ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম অনুসরণ করা হয়। ফ্লেমিংয়ের ডানহাতি নিয়ম : ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনী ও মধ্যমাগুলো পরস্পরের সাথে সমকোণে প্রসারিত করলে যদি তর্জনী চুম্বক বলরেখার দিক, বৃদ্ধাঙ্গুলি পরিবাহী তারের ঘূর্ণনের দিক নির্দেশ করে, তবে মধ্যমাগুলো উৎপাদিত ভোল্টেজের দিক নির্দেশ করবে।
এ সূত্র জেনারেটরের উৎপন্ন তড়িৎচালক ফল ও কারেন্টের দিক নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়।
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ডের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ফিল্ড ম্যাগনেটিক কয়েল দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য যে ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স প্রয়োজন হয় তা ফিল্ড কয়েলে উৎপন্ন হয়। এ ম্যাগনেটিক ফ্লাক্স আর্মেচারকে কাট করলে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় যার ফলে আর্মেচার ঘোরে। ফিল্ড করেলের কারেন্ট কম-বেশি করে উৎপন্ন ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এজন্য ভিসি জেনারেটরে ফীল্ডের প্রয়োজন হয়।
ডিসি জেনারেটরের আর্মেচারের কাজ:
ডিসি জেনারেটরের ঘুরন্ত অংশকে আর্মেচার বলে। এ আর্মেচার ম্যাগনেটিক ফিল্ডের মধ্যে ঘোরার ফলে চুম্বক বলরেখাকে কাট করে। ফলে পরিবাহী তারের মধ্যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়।
ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত ইএমএফ (EMF-Electro Motive Force ) : ভোল্ট
এখানে,
Eg = জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ, ভোল্টে
= প্রতি পোলের ফ্লাক্স সংখ্যা, ওয়েভারে
Z= আর্মেচার পরিবাহীর সংখ্যা
P = পোল সংখ্যা
A = আর্মেচার প্যারালাল পথের সংখ্যা এবং
N = আর্মেচারের ঘূর্ণন গতিবেগের সংখ্যা।
ল্যাপ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = P অর্থাৎ আর্মেচারে প্যারালাল পথের সংখ্যা ও পোল সংখ্যা সমান। কিন্তু ওয়েভ ওয়াইন্ডিংয়ের ক্ষেত্রে A = 2 ধরা হয়।
কোনো নির্দিষ্ট জেনারেটরের ক্ষেত্রে এর আর্মেচার কন্ডাক্টর সংখ্যা, পোল ও প্যারালাল পথের সংখ্যা প্রস্তুত কালেই নির্দিষ্ট করা থাকে। পরিচালনার সময় এদের কোনোরূপ পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। জেনারেটরের প্রাইমমুভারের ঘূর্ণন গতিবেগ বা চুম্বক ক্ষেত্রের শক্তি পরিবর্তন করে অথবা উভয়ের পরিবর্তন করে উৎপাদিত ভোল্টেজের পরিমাণ কম-বেশি করা যায়।
জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজ এবং টার্মিনাল ভোল্টেজ সমান নয়। উৎপাদিত ভোল্টেজ হতে এর অভ্যড় রীন কিছু ভোল্টেজ ড্রপ বাদ দিয়ে বাকি ভোল্টেজ টার্মিনালে পাওয়া যায়। একে আউটপুট ভোল্টেজ বলে।
জেনারেটরের অভ্যন্তরীন ভোল্টেজ ড্রপ, লোড কারেন্টের উপর নির্ভর করে। ফলে জেনারেটরের লোড কারেন্ট পরিবর্তনের সাথে সাথে টার্মিনাল ভোল্টেজ কম-বেশি হয়।
জেনারেটরের টার্মিনাল ভোল্টেজ প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মানে রাখার জন্য এবং ফিল্ড সার্কিটের কারেন্ট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফিল্ড রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ফিল্ড রেগুলেটর একটি পরিবর্তনশীল রেজিস্ট্যান্স।
ডিসি জেনারেটরের লসসমূহ:
মেশিন যত শক্তি গ্রহণ করে, তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। কারণ, মেশিনে নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে লস বলে। তাই, মেশিনের কর্মদক্ষতা সর্বদা একের চেয়ে কম হয়। মেশিনে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিয়ে দেয়া হলো -
(১) তামার অংশের অপচয়;
(২) লোহার অংশের অপচয়;
(৩) ঘর্ষণ ও হাওয়া কাটার জন্য অপচয়।
ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি
জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে ইনপুট এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে আউটপুট শক্তি বলে। সুতরাং ডিসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি এবং গৃহীত শক্তির অনুপাতকে ডিসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। একে 77 চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটিকে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
জেনারেটরের গতিবেগ অপরিবর্তিত থাকলেও লোড বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুল লোড ভোল্টেজের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ টার্মিনাল ভোল্টেজ কমে। এ পরিবর্তন সাধারণত আর্মেচার প্রতিক্রিয়া, আর্মেচার রেজিস্ট্যান্স, আর্মেচার রিয়্যাকট্যান্স ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে। নো-লোড ভোল্টেজ হতে ফুল লোড ভোল্টেজ পার্থক্য করলে যে ভোল্টেজ পাওয়া যায় সে ভোল্টেজের সাথে ফুল-লোড ভোল্টেজের অনুপাতকে জেনারেটরের ভোল্টেজ রেগুলেশন বলে। এটিকে V.R. দ্বারা সূচিত করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
:. শতকরা (%) V.R =
এখানে,
%V.R. = শতকরা ভোল্টেজ রেগুলেশন
VNL = নো-লোড ভোল্টেজ
VFL = ফুল লোড ভোল্টেজ
এসি জেনারেটর
যে যন্ত্রের সাহায্যে যান্ত্রিক শক্তিকে পরিবর্তিত মানের ভোল্টেজে রূপান্তরিত করা হয়, তাকে এসি জেনারেটর বলে। ডিসি জেনারেটর ও এসি জেনারেটরের উভয়ের মধ্যে পরিবর্তিত ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। ডিসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের মাধ্যমে একমূখী কারেন্ট প্রবাহে রূপান্তরিত করে। আর এসি জেনারেটরে উৎপন্ন এসি ভোল্টেজ স্পি রিংয়ের মাধ্যমে পরিবর্তিত ভোল্টেজ হিসেবে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করা হয়।
৬.২ এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশ
এসি জেনারেটরের বিভিন্ন অংশের নাম নিম্নে দেয়া হলো-
(১) আর্মেচার
(২) রোটর:
(৩) প্রাইমমুভার; (৪) এক্সাইটার;
(৫) স্পিরিংঃ
(৬) কার্বন ব্রাশ।
আর্মেচার অল্টারনেটরের স্থির অংশকে আর্মেচার বলে। আর্মচার দেখতে অনেকটা ড্রামের মতো। অল্টারনেটরের উপরের বডি সাধারণত কাস্ট আয়রনের ফ্রেম দ্বারা তৈরি করা হয়। ফ্রেমের কাজ আর্মেচারকে আটকে রাখা।
রোটর অল্টারনেটরের ঘূর্ণীয়মান অংশকে রোটর বা ফিল্ড বলে। রোটর দেখতে অনেকটা ফ্লাই হুইলের মতো। যার ভিতর N pole ও S pole সৃষ্টি করা হয়। উক্ত পোলগুলোতে 125V হতে 250V ডিসি সাপ্লাইয়ের সাহায্যে উত্তেজিত করা হয়।
প্রাইমমুভার: প্রাইমমুভার এমন একটি ইঞ্জিন, যার সাহায্যে অল্টারনেটরের রোটরকে ঘুরানো হয়। প্রাইমমুভার হিসেবে পেট্রোল ইঞ্জিন, ডিজেল ইঞ্জিন, টারবাইন অথবা বৈদ্যুতিক মোটরও ব্যবহার করা হয়।
এক্সাইটার: ডিসি সাপ্লাইয়ের উদ্দেশ্যে অল্টারনেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি ডিসি শান্ট জেনারেটর বসানো থাকে, তাকে এক্সাইটার বলে। অল্টারনেটরের ফিল্ড কয়েলকে উত্তেজিত করার জন্য এক্সাইটার ব্যবহার করা হয়।
স্পি রিং: ম্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক ম্পি রিং লাগানো থাকে।
কার্বন ব্রাশ: এটি কার্বনের তৈরি। কার্বন ব্রাশ স্লিপ রিংয়ের উপর বসানো থাকে, যার সাহায্যে রোটর ওয়াইন্ডিংকে এক্সাইটেশন করার জন্য ডিসি সাপ্লাই দেয়া হয়।
এসি জেনারেটরের কার্যপদ্ধতি
ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশনের মূলতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে এসি জেনারেটর কাজ করে। এসি জেনারেটরে আর্মেচার বা স্টেটর স্থির থাকে। আর ফিল্ড আর্মেচারের মধ্যে ঘোরে। প্রাইমমুভারের সাহায্যে ফিল্ড বা রোটরকে ঘুরালে চৌম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। তখন ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দিলে রোটর ফ্লাক্স আর্মেচার কন্ডাক্টরসমূহকে কাট করে । ফলে ফ্যারাডের ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক ইন্ডাকশন নীতি অনুসারে এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয়। এ অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে বহিঃবর্তনীতে এনে লোডে সরবরাহ দেয়া হয়। এভাবে এসি জেনারেটর কাজ করে থাকে ।
এসি জেনারেটরে ভোল্টেজ উৎপন্ন করার জন্য ফিল্ড কয়েলে ডিসি সাপ্লাই দেয়াকে ফিল্ড এক্সাইটেশন বলে। রোটরের দুটি স্লিপ রিং ও কার্বন ব্রাশের মাধ্যমে এসি জেনারেটরের ফীল্ডে সাপ্লাই দেয়া হয়।
ফিল্ড এক্সাইটেশনের বিভিন্ন পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-
(ক) কোনো এসি জেনারেটরের রোটর শ্যাফটের সাথে একটি সেলফ এক্সাইটেড শান্ট বা কম্পাউন্ড ডিসি জেনারেটর চালানো হয়। উক্ত জেনারেটরের উৎপাদিত ডিসি ভোল্টেজ এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(খ) এসি জেনারেটরের উৎপাদিত ভোল্টেজকে রেকটিফায়ারের মাধ্যমে ডিসি করে এসি জেনারেটরের ফিল্ড এক্সাইটেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
(গ) ছোট এসি জেনারেটরে ফিল্ডকে স্থির রেখে আর্মেচারকে ঘোরোনো হয় এবং সেক্ষেত্রে ঘুরন্ত আর্মেচার হতে স্লিপ রিং ও ব্রাশের সাহায্যে এসি বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে এসি ওয়াইন্ডিংয়ের উপর অন্য একটি ছোট ডিসি ওয়াইন্ডিং হয়। স্লিপ রিংয়ের অপর প্রান্তে কম্যুটেটর বসিয়ে তার সাথে ডিসি ওয়াইন্ডিং সংযোগ করা হয়। আর্মেচারের ডিসি ওয়াইন্ডিংয়ে উৎপাদিত ভোল্টেজ কম্যুটেটর ও ব্রাশের সাহায্যে সংগ্রহ করে ফিল্ড এক্সাইটেশন দেয়া হয়।
ল্পি রিং পিতলের তৈরি যা কতগুলো সেগমেন্টে বিভক্ত করা থাকে। অল্টারনেটরের রোটরের সাথে দুই বা ততোধিক স্পি রিং লাগানো থাকে। এসি জেনারেটরে উৎপন্ন অল্টারনেটিং ভোল্টেজকে পি রিংয়ের মাধ্যমে বহিঃবর্তনীতে প্রেরণ করাই স্পি রিংয়ের কাজ।
এসি জেনারেটরের বাইরে থেকে যত শক্তি গ্রহণ করে তত শক্তি লোডে কখনও সরবরাহ করতে পারে না। ফলে এসি জেনারেটরের নানাভাবে কিছু না কিছু শক্তির অপচয় হয়। এ অপচয়কে এসি জেনারেটরের লস বলে। এসি জেনারেটরে যে সমস্ত অপচয় হয় তা নিম্নে দেয়া হলো -
(১) কপার লস
(২) কোর লস;
(৩) ব্রাশ ফ্রিকশন লস ।
(৪) রোটেশন লস;
এসি জেনারেটরকে পরিচালনার জন্য যে শক্তি বাইরে থেকে দেয়া হয় তাকে গৃহীত শক্তি এবং জেনারেটর থেকে যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে উৎপাদিত শক্তি বলে। এসি জেনারেটরের উৎপাদিত শক্তি ও গৃহীত শক্তির অনুপাতকে এসি জেনারেটরের ইফিসিয়েন্সি বা কর্মদক্ষতা বলে। এটিকে n দ্বারা প্রকাশ করা হয়। একে ১০০ দ্বারা গুণ করে শতকরা হিসেবে প্রকাশ করা যায়।
: . কর্মদক্ষতা% =উৎপাদিত শক্তি/গৃহীত শক্তি x ১০০
পোর্টেবল জেনারেটর একটি বৈদ্যুতিক শক্তির উৎস। এটি সাধারণত গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থ হলে ব্যাকআপ পাওয়ার সরবরাহ করতে পারে। এটি বাড়ির বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আফিস আদালত ইত্যাদি জায়গায় সমস্ত বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার হয় না। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিসমুহ যেমন লাইট, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার, হাসপাতালে অস্ত্রপচার ইত্যাদি জরুরি কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে জেনারেটর ব্যবহার করা হয় তাকে পোর্টেবল জেনারেটর বলে। এটি মূলত এসি জেনারেটর। অনেক সময় বড় আকারের পোর্টেবল জেনারেটর জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিদুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান/কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যর্থ হলে বাড়ির বা কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আফিস আদালতে সমস্ত সরজামাদিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার প্রয়োজন হয়। কেবলমাত্র জরুরি প্রয়োজনীয় ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতিসমূহ যেমন লাইট, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য পোর্টটেকল জেনারেটরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
Read more